অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালীন সময়ে মোট ৫ ধরনের মাদকে আসক্ত
ছিল ঐশী। হেরোইন, পেথেড্রিন, ইয়াবা,
অ্যালকোহল ও গাঁজা সেবনে অভ্যস্ত ছিল সে। প্রতি মাসেই নতুন নতুন
পদ্ধতিতে বাবা-মাকে বলে সে প্রায় ৫০ হাজার টাকা হাতখরচ হাতিয়ে নিত। মূলত বন্ধুরাই
তাকে বিভিন্ন ধরনের মাদক সরবরাহ করতো। যে নেশা
জীবনের জন্য কাল হল সেই নেশাকে ভুলতে পারছে না ঐশী।
পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদে থেকেও
মাদকের জন্য হাঁস-ফাঁস করছে সে। মাঝেমধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ করছে। যেকোনো মূল্যে
একটি ইয়াবা ট্যাবলেটের জন্য বারবার পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে কাকুতি-মিনতি করছে
ঐশী। ঐশী নেশায় এতটাই বুদ হয়ে পড়েছিল যে, বাবা-মা তাঁর জীবনের কতবড় সম্পদ সেই কথাটিও
ভুলে গিয়েছিল। চোখমুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ছে সময়ে সময়ে।
পুলিশ ইন্সপেক্টরের কন্যা হিসেবে ঐশীকে
টার্গেট করেছিল ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। ইয়াবার চালান সরবরাহে তার প্রভাব কাজে
লাগানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। পাশাপাশি ডিজে ও ড্যান্সার গ্রুপের বিভিন্ন
অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছিল। এসব গ্রুপের কাছ থেকে মাঝে-মধ্যেই মোটা অঙ্কের
অর্থ উপার্জন শুরু করেছিল ঐশী। এ কারণে তার মা স্বপ্না রহমান মেয়ের কর্মকাণ্ডে
সন্দেহ করেছিলেন। মধ্যরাতে বাসায় ফেরা ও তার কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দেখে প্রশ্ন
করেছিলেন। রমজান মাসের কয়েকদিন আগে রাত ১২টার দিকে বাসায় ফিরলে তার মা বেশ্যা
বলে গালাগাল দেন। বলেন, এত রাত পর্যন্ত তুই
কার কাছে শুয়েছিলি? তোর কাছে টাকা আসে কিভাবে? তুই একটা বেশ্যা। দেহ খাটিয়ে টাকা কামাই করছিস। মায়ের কাছ থেকে এমন
গালাগাল শোনার পর বাসা থেকে পালানোর সিদ্ধান্ত।
রমজান মাসের শুরুতে ঐশী বাসা থেকে
পালিয়ে বয়ফ্রেন্ড জনির আশ্রয়ে থাকে। ঐশীর সঙ্গে সম্পর্কের পাশাপাশি জনি মেরুল
বাড্ডায় আইরিন নামে আরও এক তরুণীর সঙ্গে লিভ টুগেদার করতো। সেই সুবাদে আইরিনের
দুই রুমের ভাড়া বাসার একটি রুমে ঐশী থাকতে শুরু করে। সেখানে মাদক গ্রহণ ও জমিয়ে
আড্ডা দেয়া হয়। বেড়ে যায় বয়ফ্রেন্ডদের যাতায়াত।
এদিকে ঐশীর বাবা মেয়েকে না পেয়ে
বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। দুই সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন জায়গায়
অনুসন্ধান চালিয়ে রমজান মাসে মেয়েকে ওই বাসা থেকে নিয়ে আসেন। বাসায় আনার পর
তার মা তাকে প্রায় বন্দি করে রাখেন। এরপরই সে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে।
গোয়েন্দারা জানান, ঐশী একাধিকবার
আত্মহত্যার কথা চিন্তা করেছিল। পরে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে
বন্ধু-বান্ধবের প্ররোচনায় নিজের পিতা-মাতাকেই হত্যা করেছে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন