ইয়াবা এমন একটি মাদক, যা মানুষকে শুধু
মৃত্যুর দিকেই ঠেলে দেয় না মৃত্যুর আগে ওই ইয়াবাসেবীকে পাগলে পরিণত করে ফেলে।
প্রাথমিকভাবে ইয়াবার এই ভয়ঙ্কর রূপ কেউ বুঝতে পারে না। দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও
পর্যবেক্ষণের পর এমন প্রমাণ পেয়েছেন মাদকদ্রব্য নিরাময় কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ মাদকাসক্ত চিকিৎসা ও
পুনর্বাসন কেন্দ্র বারাকার এডুকেটর ডিডক্স জাকিউল আলম মিলটন বলেন, মাদক মাত্রই মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর মাদক মানেই মৃত্যু। মাদক সেবনকারী
বিভিন্নভাবে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগোতে থাকে। কিন্তু ইয়াবা এমন একটি ভয়ঙ্কর
মাদক, যা মানুষকে শুধু মেরেই ফেলে না মারার আগে ওই
মানুষকে পাগলে পরিণত করে ফেলে। যার পাগলামির কারণে গোটা পরিবার ধ্বংস হয়ে যায়।
মিলটন বলেন, প্রাথমিকভাবে
ইয়াবা শরীরে উত্তেজনা বাড়িয়ে দেয়। মন থেকে ভয়ভীতি দূর করে দেয়, যার কারণে সে বুঝতে পারে না কী করবে। সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। এক সময়
ভয়ঙ্কর কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। ইয়াবা সেবনকারীদের মধ্যে বেপরোয়া মনোভাব সব
থেকে বেশি থাকে। একটি কাজ করলে পরে তার ফল কী হবে সেটা ভাবে না। সেবনের একপর্যায়ে
সে ধীরে ধীরে তার পাশে একটি অবাস্তব জগৎ তৈরি করতে থাকে। কল্পনায় সে তার চার
পাশের মানুষদের শত্রু ভাবতে শুরু করে। একপর্যায়ে গিয়ে ইয়াবা সেবনকারী নিজেকেই
শত্রু ভাবতে শুরু করে। তার কাছে মনে হয় তার নিজের ছবিই তাকে হত্যা করবে। কাউকেই
বিশ্বাস করতে পারে না। এমনকি নিজেকেও না। এসব ভাবতে ভাবতে একপর্যায়ে সে পাগল হয়ে
যায়। তিনি বলেন, যেকোনো
মাদকই মস্তিষ্কে বিকৃতি ঘটায়, যার কারণে স্বাভাবিক চিন্তা
করতে পারে না। তবে এটি হয় যখন ওই ব্যক্তি মাদকাসক্ত থাকে। কিন্তু ইয়াবার
ক্ষেত্রে ভিন্নতা রয়েছে। ইয়াবা সেবন করতে করতে একপর্যায়ে সব সময়ের জন্য
মস্তিষ্ক বিকৃত হয়ে থাকে।
মনোচিকিৎসক এর মতামতঃ বিশিষ্ট মনোচিকিৎসক ডা.
মোহিত কামাল বলেন, ইয়াবা নামের এই মাদকটি দেহের
মারাত্মক ক্ষতি করে। এ মাদক সেবন করলে দেহের রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। অনিদ্রা হতে
পারে এবং এ থেকে নানান দৈহিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। ইয়াবা সেবনে ফুসফুসের ক্ষতি ও
ক্ষুধামন্দা হতে পারে। ব্রেইন স্ট্রোক ও হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারে। আর ইনজেকশন
ফর্মে বেশি ডোজ নিলে আকস্মিক খিঁচুনি হয়ে মৃত্যুও হতে পারে। মোহিত কামাল আরো জানান,
এই মাদক একবার নিলে বারবার নিতে হয়, ছাড়া
যায় না। এতে কর্ম ও যৌনক্ষমতা কমে যায়।
ইয়াবা অর্থ পাগলা ঔষধঃ প্রথমদিকে ইয়াবা যৌনউত্তেজক বড়ি
হিসাবে বাজারে পরিচিত ছিলো। কিন্তু দীর্ঘদিন সেবনের ফলে যৌন ক্ষমতা হ্রাস পেতে
পারে। যুক্তরাজ্যের ড্রাগ ইনফরমেশন এর
ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী ইয়াবা ট্যাবলেটি খেলে সাময়িক
ভাবে উদ্দীপনা বেড়ে যায়। কিন্তু এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হেরোইনের চেয়েও ভয়াবহ।
থাইল্যান্ড: থাই সরকার ১৯৭০ সালে ইয়াবা ট্যাবলেটকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সেসময় এটি
সেদেশে পেট্রল পাম্পে বিক্রি হতো, এবং থাই ট্রাক চালকেরা জেগে
থাকার জন্য এটা ব্যবহার করতো। ইয়াবাসেবী ট্রাক ও বাস চালকদের হাতে অনেক গুলো
ভয়াবহ বাস দূর্ঘটনা ঘটেছে। থাই প্রধানমন্ত্রী থাকসিন শিনাওয়াত্রা ২০০৩
সালের নির্বাচনী প্রচারণায় মাদক চোরাচালানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। এরপর থেকে
থাইল্যান্ডে এই মাদকের প্রকোপ কমে এসেছে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন